বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ব্রিটিশ আইনজীবী টোবি ক্যাডম্যান। এই টোবি ক্যাডম্যানকে ২০১১ সালে লন্ডনে নিজেদের আইন উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল জামায়াতে ইসলামী।
মঙ্গলবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে ক্যাডম্যান নিজেই স্বীকার করেছেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে অনুরোধ করেছেন তিনি।
ব্যারিস্টার টোবি ক্যাডম্যানকে বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী দল ২০১১ সালে লন্ডনে নিজেদের আইন বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল। ওই সময় একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিচার শুরু হয়েছিল। সে সময় পাঁচ জামায়াত নেতার আইনজীবী তাজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, স্টিভেন ক্যা কিউসি, টোবি ক্যাডম্যান ও জন ক্যামেগ রাজি হয়েছেন জামায়াত নেতাদের মক্কেল হিসেবে গ্রহণ করতে।
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য লবিংয়ের কথা স্বীকার করে আল জাজিরাকে ক্যাডম্যান বলেন, আমি নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য অনুরোধ করেছি। যদিও আমি বিস্তারিত বিষয় নিয়ে আলোচনার মতো অবস্থায় নেই। তবে আমি নিশ্চিত করতে পারি যে এই নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ নিয়ে আমি পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
ক্যাডম্যান আল জাজিরাকে আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কাছে নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ জানিয়ে কাজ করার কারণে আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি সমন্বিত পদক্ষেপ জরুরি ছিল। যুক্তরাজ্যে আমাদের নিষেধাজ্ঞার অনুরোধের লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা খাতে জড়িতরা।
ব্রিটিশ ব্যারিস্টার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিতভাবে যুক্তরাজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করবে বলে আমার অবস্থান ছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য তা না করায় আমি চরম হতাশ হয়েছি।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের এক লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কাছে পাঠানো নিষেধাজ্ঞার অনুরোধের সঙ্গে র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ তারা যুক্ত করেছিলেন।
টোবি ক্যাডম্যান ২০১৬ সালের শুরুর দিকে জামায়াত নেতা মীর কাসেমের লবিস্ট হিসেবে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। হাফিংটন পোস্টে তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়কে পাশ কাটিয়ে কেবল বিরোধীদলীয় নেতাদের বিচারের বিষয়টিকে বিকৃতভাবে তুলে ধরেছিলেন।
ওই সময় মীর কাসেমের মামলার আপিল শুনানিকালে প্রধান বিচারপতির তোলা কিছু প্রশ্নকে ভুলভাবে উপস্থাপন করে পুরো বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলায় শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা। তারা বলেছিলেন, প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে কাজ হাসিলের চেষ্টায় আছেন ক্যাডম্যান।
তখন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, টবি ক্যাডম্যান শুরু থেকেই জামায়াতের ভাড়াটে আইনজীবী হিসেবে বিভিন্নভাবে এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছেন। শুনানির খণ্ডিত অংশকে ব্যবহার করে চূড়ান্ত রায়ের কয়েক দিন আগে ক্যাডম্যানের এ ধরনের লেখা খুবই শঙ্কাজনক। এককথায় বিতর্ক সৃষ্টির জন্য প্রধান বিচারপতির বক্তব্যকে ব্যবহার করছেন মীর কাসেমের এই লবিস্ট।
শুধু মীর কাশিমের আপিল শুনানি নয়। ২০১১ সালে জামায়াতে ইসলামী লন্ডনে টোবি ক্যাডম্যানকে তাদের পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগের সময় ক্যাডম্যান তখন ‘নাইন বেডফোর্ড রো’ নামে একটি ফার্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
পরবর্তী কয়েক বছরে টোবি ক্যাডম্যান জামায়াতের হয়ে আল জাজিরা, বিবিসি, সিএনএনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে অনেকবার সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। জামায়াতের বক্তব্য তুলে ধরেছেন বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনা সভাতেও। বিভিন্ন নিবন্ধ ও ব্লগ লিখেও প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন, বাংলাদেশে যে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে তা একটি ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ ছাড়া কিছুই নয়! –খবর বাংলা ট্রিবিউনের