• ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২২শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সুনামগঞ্জে মৌসুমী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু : দূর-দূরান্ত থেকে আসে ঘোড়া ও দর্শকরা

Dainik Shallar Khabor.com
প্রকাশিত জানুয়ারি ৩০, ২০২৩
সুনামগঞ্জে মৌসুমী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু : দূর-দূরান্ত থেকে আসে ঘোড়া ও দর্শকরা

শাল্লার খবর ডেস্ক ::: 
প্রতি বছরের ন্যায় এবারও সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় শুরু হয়েছে মৌসুমী ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে ঘোড়া নিয়ে ঘোড়দৌড়ে অংশ নিচ্ছেন সৌখিন ঘোড়া মালিকরা। প্রতিটি গ্রামীণ বিনোদনমূলক এই প্রতিযোগিতা তিন দিনব্যাপি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ঘোড়ার মালিকদের দেওয়া হয় টেলিভিশন, খাসি, মোবাইল ফোনসহ নানা আকর্ষনীয় পুরস্কার। ঘোড়দৌড় দেখতে নানা বয়সী দর্শকের ঢল নামে। আশপাশের জেলা ও উপজেলাসহ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শকরা।
জানা যায়, হাওরে বোরো ধান রোপন প্রায় শেষ। তাই পৌষ মাস থেকে ধান কাটার আগ পর্যন্ত কৃষকদের কাজ কিছুটা কম থাকায় সৌখিন ঘোড়ার মালিকরা কৃষকদের বিনোদনের জন্য ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করছেন। প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রণ জানানো হয় আশপাশের জেলা ও উপজেলার সকল ঘোড়ার মালিকদের। হাওরের অনাবাদী জমি ও আমন ধান কাটার পর সমতল জমিতে আয়োজন করা হয় এই প্রতিযোগিতার। বিভিন্ন এলাকা থেকে সোনার হরিণ, উড়িয়াবাজ, উড়ালপঙ্কী, পাগলা ঘোড়া, সমীর বাংলা, অচিনপাখি, পাখির বাচ্চা, আলিম বাদশা, আমিন রাজাসহ নানা আকর্ষণীয় নামের ঘোড়া নিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন শতশত ঘোড়ার মালিক।
ইতোমধ্যে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জের দুর্লভপুর, বিশ^ম্ভরপুর ও ছাতকের চেচানে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা সম্পন্ন হয়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লপাড়া ইউনিয়নের বেতগঞ্জ বাজারের পাশের জালালপুর ও লালপুরের মধ্যবর্তী আমন জমিতে তিন দিনব্যাপি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতা চলছে। গত রবিবার থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগিতা আজ মঙ্গলবার শেষ হবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার পিরিছপুর গ্রামের বাসিন্দা মো. সামছুদ্দিন বলেন,‘ অনেক দূর হলেও প্রতি বছরই আমি ঘোড়দৌড় দেখতে আসি। ঘোড়ার দৌড় দেখতে খুব আনন্দ লাগে। প্রত্যেক এলাকায় যেন এমন ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করা হয়। তাহলে গ্রামের মানুষ আনন্দ পাবে।’
সুনামগঞ্জের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শফিকুল ইসলাম বেতগঞ্জের ঘোড়দৌড় দেখতে গিয়ে বললেন,‘ আমার বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। বহুদিন ধরে ঘোড়দৌড় দেখার ইচ্ছা ছিল আমার। খুব আনন্দের সাথে বেতগঞ্জে ঘোড়দৌড় দেখেছি। হাজার হাজার মানুষ উৎসবের মত ঘোড়দৌড় উপভোগ করছে।’
জামালগঞ্জের খুজারগাঁও গ্রামের রবীন্দ্র তালুকদার বলেন,‘ আমি গত বছর শখ করে একটা বাচ্চা ঘোড়া কিনেছি। এই বছর প্রথম তিনটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। যেখানেই ঘোড়দৌড়ের আমন্ত্রণ পাচ্ছি সেখানেই যাচ্ছি।’ শান্তিগঞ্জের জীবদ্বারা গ্রামের আলা উদ্দিন আহমদ বললেন,‘ বহুদিন ধরে ঘোড়া লালন-পালন করছি। পৌষ মাস থেকে শুরু করছি চৈত্র মাস পর্যন্ত ঘোড়া নিয়ে সব ঘোড়দৌড়ে যাব। ধান কাটার আগ পর্যন্ত ঘোড়দৌড়ে অংশগ্রহণ করব।’
জামালগঞ্জের বিছনা গ্রামের ‘সোনার বাংলা’ ঘোড়ার মালিক সাব্বির আহমদ বলেন,‘ আমি আগে সারাদেশের মধ্যে সেরা ঘোড়ার সওয়ার ছিলাম। মেলায় মেলায় ঘোড়া দৌড়াইছি। এখন নিজের মালিক হিসেবে সকল ঘোড়দৌড়ে অংশগ্রহণ করছি। ঘোড়দৌড়ের চেয়ে শখের ভালো কিছু নাই। ’
সিলেটের জালালাবাদ থানার শিবের বাজার গ্রামের ঘোড়ার মালিক আসলাম মিয়া বললেন,‘ এক বছর আগে আমি বিদেশ থেকে দেশে এসে শখ করে দুইটি ঘোড়া কিনেছি। একটির নাম উড়িয়াবাজ, আরেকটির নাম পারলে ধর। যেখানেই ঘোড়দৌড় হয়, আমন্ত্রণ পেলে সেখানেই গাড়িতে করে ঘোড়া নিয়ে যাই। মানুষকে আনন্দ দেওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য। ’
সদর উপজেলার জালালপুর ও লালপুরের ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান ও সদস্য সফিক মিয়া বললেন,‘ গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা ও কৃষকদের আনন্দ-বিনোদন দেওয়ার জন্যই প্রতি বছর সৌখিন ও প্রবীণদের উদ্যোগে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করি আমরা। প্রতিযোগিতায় আশপাশে জেলা ও উপজেলার সকল ঘোড়ার মালিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। যারা আমাদের দাওয়াত পেয়েছেন সবাই ঘোড়া নিয়ে এসেছেন। পর্যায়ক্রমে আগামী বৈশাখ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় এই ঘোড়দৌড় চলবে।’
জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বললেন,‘ মানুষ সুদীর্ঘকাল থেকে বাহন হিসেবে ঘোড়াকে ব্যবহার করে আসছে। কালের বির্বতনে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন হওয়ায় ঘোড়া কমেছে। তবে ঘোড়দৌড় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। গ্রামের লোকজন এখনও ঐহিত্য ধরে রেখেছে। ঘোড়দৌড় গ্রামের মানুষের বিনোদনেরও একটা উৎস, তারা এটাকে উৎসবের মত পালন করেন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যকে তুলে ধরা এবং সকলকে বিনোদন দেবার জন্যই ঘোড়দৌড়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মানুষ উৎসাহ উদ্দীপনার মাধ্যমে ঘোড়দৌড় উপভোগ করছে।’