সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এই পেশাকে বলা হয় রাস্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ। এই পেশার যেমন গুরুত্ব আছ তেমনি আছে অপরিসীম সম্মান। আমাদের সমাজে মানুষজন সাংবাদিকদের সব সময় সম্মানের চোখে দেখে থাকে। কিন্তু কিছু সাংবাদিক নামধারী’র নিজের স্বার্থের জন্য এই পেশাটি মাঝে মাঝে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছেন। সাংবাদিকতার পেশা রকমফের আছে, পেশাগত সাংবাদিকতা এবং অপেশাদার সাংবাদিকতা। আমরা যারা মফস্বলে সাংবাদিকতা করি সবাই অপেশাদার সাংবাদিক হিসাবে সমাজে বিবেচ্য। আমরা যেহেতু অপেশাদার সাংবাদিকতা করি তাই আমরা উপজেলা পর্যায়ে সংবাদদাতা হিসাবে গণ্য করা হয়।
স্টাফ রিপোর্টার ও বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকগণ পেশাদারি সাংবাদিকতা করে থাকেন।
আমাদের মফস্বলে সাংবাদিকতার পরিবেশ ভিন্ন।
উপজেলা পর্যায়ে পেশাদারি সাংবাদিকতা হওয়ার কথা নয়, সেখানে পেশাদারি সাংবাদিকতার সুযোগ তেমন একটা নেই বলে চলে।
কিন্তু কিছু কিছু সাংবাদিক নামধারী সংবাদ কর্মী আছেন যারা এক সময় বিভিন্ন শ্রেণি পেশায় যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে উপজেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের মাঝে বিভক্তির কারনে এসব লোক এই পেশায় নাম লেখিয়েছেন। আবার অনেকেই এর মাঝে বেশ নামদাম কামিয়ে ফেলেছেন!
অনেক দেখা যায় আগের পেশা বাদ দিয়ে পুরোদমে সাংবাদিকতায় নাম লিখিয়েছেন! তাদের হাবভাবে বুঝা যায় এই পেশার ভাল করছেন তারা।
আমরা অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে বানিয়াচংয়ের সিনিয়র পর্যায়ে সাংবাদিকতা করি, অনেক সময় এসব লোকের সাংবাদিকতার দেখে লজ্জায় পরে যাই আমরা।
এসব সাংবাদিকদের কর্মকাণ্ডে এই মহান পেশায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে এই সমাজে। প্রায় সময় সাংবাদিকতা নিয়ে মানুষের টিপ্পনী খেতে হয়।
অনেক কে বলতে শোনা যায় বানিয়াচংয়ে সাংবাদিক হওয়া খুবই সহজ! কোন প্রকার শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সামাজিক যোগ্যতার প্রয়োজন পড়ে না। এসব শুনলে একজন সাংবাদিক হিসাবে নিজেকে অপরাধী মনে হয়। লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে। আমরা দেখেছি সাংবাদিক শব্দটা অনেক স্পষ্ট করে উচ্চারণ করতে পারেন না এটা তো লজ্জার বিষয়!
আমাদের কিছু মানুষের স্বার্থের জন্য বানিয়াচংয়ের সাংবাদিকদের এমন দশা।
মাঝে মাঝে দেখা যায় একই ঘটনার বিবরণ দুভাবে পত্রিকায় ছাপা হয়। আর এটা হল কয়েক ভাগে আমরা বিভক্ত হওয়ার কারন হিসেবে অনেকেই মনে করেন। অন্যদিকে কিছু অনিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল আছে, সেগুলো থেকে মাঝে মাঝে দেখা যায় মনগড়া ভাবে সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ আছে সমাজে।
আরো কিছু আশ্চর্য তথ্য পাওয়া গেছে, একসময়ে বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িতরা এই লাইনে নাম লিখিয়েছেন!এমন ঘটনা সত্যি হলে সেটা খুবই বিপদজনক! আর এসবের কারন হল সাংবাদিকদের বিভক্তি।
বানিয়াচংয়ের কি পরিমান সাংবাদিক আছেন সেটা সঠিক হিসাব নাই, অনেক ধারণা এই সংখ্যা কয়েক শতাধিক হবে!
সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন হওয়াতে অনেক সময় একে অপরের বিরুদ্ধে যেতে সময় লাগে না। এখানে একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য, গত বছর তেমনি একটি ঘটনায় সবার নজর কেড়েছে। ভূপর্যটক রমানাথ বিশ্বাসের বাড়ি নিয়ে প্রতিবেদন তৈরী করার সময়, অবৈধ দখলদারদের হামলায় ঢাকা থেকে আগত সিনিয়র সাংবাদিক রাজীব নূর ও বানিয়াচং প্রেসক্লাব সভাপতি মোসাহেদ মিয়া সহ কয়েকজন আহত হন। এবং এই নিয়ে মামলা মোকদ্দমা হয় এবং পরবর্তীতে এই ইস্যু নিয়ে জোড়ালো আন্দোলন সংগ্রামও হয়েছে।
সেখানে লক্ষ করলে দেখা যায়, সেই হামলার প্রকৃত ঘটনার বিবরণ কিছু সংবাদ কর্মী ভিন্ন ভাবে নানান মিডিয়া সংবাদ পরিবেশন করেছেন। এটা নিয়েও সচেতন মহলে বেশ সমালোচনা হয়ছিলে। এভাবে চলতে থাকলে সামনে আরো ভয়ংকর সময় অপেক্ষা করছে আমাদের সবার জন্য!
আমরা দেখে আসছি কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের মাঝে দলাদলি বা কোন্দল লক্ষ করা যেত। কিন্তু বানিয়াচংয়ে সাংবাদিকদের এত দলে বিভক্ত তা দেখে নিজেই লজ্জিত। এসব দলাদলির মধ্যে আমিও পড়ি! কারন এই বিভাজনের মাঝে আমিও একটি দলে আছি। আমাদের এই বিভক্তি কে একত্রি করনের জন্য বহুবার চেষ্টা করা হয়েছিল। সেটা আমাদের প্রয়াত হাফিজ ছিদ্দিক আহমদ চাচা এবং আখলাক হোসেইন খেলু ভাইয়ের সময় থেকে। কিন্তু অনেক আলোচনার পর তেমন অগ্রগতি হয়নি। পরবর্তীতে উনাদের মৃত্যুর পরও অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছিল তারপর ও কোন সমাধানে আসা যায়নি।
২০২০ সালে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র সাংবাদিক সাখাওয়াত কাওসারের অক্লান্ত পরিশ্রমে সবাই এক টেবিলে বসার সুযোগ হয়েছিল। সেদিন সবাই একমত হয়ে দুইটি সেশনের জন্য ২ টা কমিটির ঘোষণা করা হয় হয়। আমরা সেদিন সবাই মিলে একমত হয়ে বেড়িয়ে ছিলাম। কিছু সব ঠিক ঠিক চলার পর আবারও সেই পুরোনো রূপে ফিরে যায় বানিয়াচংয়ের সাংবাদিকদের বিভাজন।
আবারও মাথাচড়া দিয়ে উঠে পূর্বের বিভক্তি । আবারও কয়েক দলে বিভক্ত হয়ে পড়ল বানিয়াচংয়ের সাংবাদিক সমাজ। এখন এভাবেই চলছে বানিয়াংয়ের সাংবাদিকতা।
বানিয়াচংয়ে সাংবাদিকতার প্রবাদ পুরুষ মরহুম হাফেজ ছিদ্দিক আহমদ ও মরহুম আখলাক হোসাইন খেলু উনারা বানিয়াচংয়ের সাংবাদিকতার প্রাণ পুরুষ ছিলেন। উনারা সহ আরো অনেকে মিলে বানিয়াচংয়ে প্রথম প্রেসক্লাব গঠন করেন। সেই পথ চলা থেকে বানিয়াচংয়ের ইতিহাসে উনাদের নাম স্বর্নকারকে লিখা থাকবে।
আমার সাংবাদিকতার গুরু মরহুম হাফেজ ছিদ্দিক আহমদ চাচা, উনার মাধ্যমে আমার এই পথে চলা।
হবিগঞ্জের স্বনামধন্য স্থানীয় পত্রিকা দৈনিক হবিগঞ্জ এক্সপ্রেস এর মাধ্যমে এই যাত্রা শুরু হয়।
তিনি আমাকে সে সময় চিম্ময় আচার্য্য দাদার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, এবং প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করার অনুমতি দেন চিম্ময় দা।
সেই থেকে এই পথের যাত্রা শুরু হয়।
পরবর্তীতে দৈনিক ভোরের কাগজে বানিয়াচং প্রতিনিধি হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করি। পাশাপাশি সিলেটের স্বনামধন্য প্রাচীন পত্রিকা দৈনিক যুগভেরীতে কাজ শুরু করি এবং এখনও নিয়মিত সংবাদ ও বিভিন্ন আর্টিকেল লিখি।
এসব পত্রিকায় কাজের সুবাদে অনেক অভিজ্ঞতা লাভের সুযোগ হয়। পরিচয় হয় অনেক স্বনামধন্য সাংবাদিকদের সাথে।
পাশাপাশি সাংবাদিকতার বেশ কিছু প্রশিক্ষণও নিয়ে নিলাম। তাদের মধ্যে ২০০৬ সালে বাংলাদেশ প্রেস ইনিস্টিউটের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ ছিল অন্যতম। এছাড়া ও বিভিন্ন সংস্থার কাছে প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা আছে আমি সহ বানিয়াচংয়ের অনেক সংবাদ কর্মীর।
কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয় এখনকার বানিয়াচংয়ের সাংবাদিকদের মধ্যে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে সেই সুযোগে অনেক অযোগ্য মানুষ এই মহান পেশাটিকে প্রায়ই সময় প্রশ্নবিদ্ধ করছেন।
কিছু সাংবাদিক নামধারী মানুষের জন্য এই পেশার নিত্য মর্যাদাহানী প্রতিনিয়ত হচ্ছে। সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে পুরোদমে দালালী ও অর্থ কেলেংকারী অভিযোগ আছে অনেকের বিরুদ্ধে।
সাংবাদিকতার আড়ালে অনেক মানুষ অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক মানুষ এটাকে পুঁজি করে লাখপতি হয়েছেন এমনও নানান জল্পনা সমাজে বিদ্যমান!
মাঝে মাঝে দেখা যায় একজন সাংবাদিক অন্যজনের বিরুদ্ধে চরিত্র হনন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ভাব লেখালেখি করছেন এটাও আমাদের কে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। এসব বিষয়ে নিয়ে আদালতের দারস্থ হওয়ার সংবাদ পাওয়া যায়!
মাঝে মাঝে এসব নিয়ে কিছু সাংবাদিক পক্ষে বিপক্ষে যেতে দেখা যায়। এটা বানিয়াচং সংবাদ কর্মীদের জন্য লজ্জাকর। গ্রুপিং লবিং থাকতে পারে একজনের মতের সাথে না মতের মিল না হতে পারে, এরজন্য চরিত্র হনন নিয়ে লেখালেখি শোভনীয় নয়। সাংবাদিকদের মধ্যে পারস্পারিক শ্রদ্ধা মর্মত্ববোধ থাকাও জরুরি।
সোস্যাল মিডিয়া প্রায় সময় একে অপরের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন এটা খুবই উদ্বেগের ব্যাপার। এসব থেকে দ্রুত আমাদের বেড়িয়ে আসতে হবে। না হলে সমাজের মানুষ আমাদের কে ভাল চোখে দেখবে না। তাই এসব অপ-সাংবাদিকতা থেকে দ্রুত বেড়িয়ে আসা জরুরি।
বর্তমানে এই পেশা কিছু তরুন ও শিক্ষিত মানুষ আসছেন এটা খুবই ভাল খবর। আমরাও চাই এই পেশার ভাল এবং শিক্ষিত মানুষ আসুক। আমাদের পরবর্তীতে সুযোগ্য উত্তরসুরীরা এই মহান পেশার হাল ধরুক।
আমরা সাংবাদিকতার বিষয়ের অনেক বইয়ের পড়েছি এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণে জেনেছি মফস্বলে সাংবাদিকতা করতে হলে পেশাদারি সাংবাদিকতা করা সম্ভব নয়। মফস্বলে সাংবাদিকতার করতে হলে, অন্য পেশার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতে হবে। তা না হলে পেশাদারি সাংবাদিকতা করলে অন্যায় এবং দূর্নীতির আশ্রয় নিতে হবে বলে অনেকের মতামত। ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্রদ্ধেয় শ্যামল দত্ত সব সময় আমাদের কে বলতেন আপনারা যারা উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি, আমরা হয়তো সেভাবে কোন প্রকার বেতন ভাতাদি দেয়ার সুযোগ থাকে না। তাই মফস্বলে সাংবাদিকতা করতে হলে অন্য পেশার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতে হবে।
আমিও ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি এই পেশা আসার আগে ভেবে চিন্তে আসার প্রয়োজন। পেশাদারি সাংবাদিকতা করার সুযোগ নাই উপজেলা পর্যায়ে। অন্য পেশার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করতে হবে, তা না হলে হলে এই পেশা না আসা ভাল।
এই পেশায় আসতে হলে তারও আগে নিজেকে শুদ্ধ করতে হবে। সাংবাদিকতার আইন কানুন মেনে ও জেনে চলতে হবে। তা না হলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি থাকে। আপনার আমার হাতে কলম থাকলেই যা খুশি লিখা যাবে না। তত্ত্ব উপাত্ত জেনে এবং উপযুক্ত প্রমান সাপেক্ষে সংবাদ পরিবেশন করতে হবে।
আপনার আমার সংবাদ পরিবেশনে অনেকের বিপক্ষে যেতে পারে, কিন্তু আপনাকে সঠিক সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। তখন যদি কোন পক্ষ আপনার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয় তা হলে আপনার কোন ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। আপনি ন্যায় বিচার পাবেন, সাধারণ মানুষের সমর্থন পাবেন। সাধারণ মানুষ কে পাশে পাবেন। এমন নজির কিন্তু বানিয়াচংয়ে অহরহ আছে, অতীতে সাংবাদিকদের পাশে সব শ্রেণি পেশার মানুষ পাশে দাড়িয়েছেন।
তাই সব সময় সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে সংবাদ পরিবেশন করা জরুরি।
আপনার আমার সংবাদে অনেকেই খুশি না হতে পারে, এতে কিছু আসে যায় না, আমার লক্ষ থাকবে নিরপেক্ষতা বজায় রেখে সংবাদ পরিবেশন করা।
সব সময় চেষ্টা করবেন ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করা। এলাকার পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী এবং এলাকার পর্যটন বা দর্শনী স্থান নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন (ফিচার নিউজ)করা। এতে আমাদের এলাকায় পর্যটনের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হবেন। আমাদের এলাকায় একটি পর্যটনের অপার সম্ভাবনার জায়গায়। পর্যটনে মানুষজন আকৃষ্ট হলে এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হবে প্রচুর মানুষের।
প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ বানিয়াচংয়ে আসেন ঘুরতে। দেখে যান বানিয়াচংয়ের ঐতিহাসিক স্থানগুলো।
সব দিকে থেকে আমরা বানিয়াচং বাসী কিন্তু পৃথিবীর সেরা গ্রামের মানুষ, তাই কাজ কর্মে আমরা যেন সে রকম প্রমান দেই।
আপনার আমার মনে রাখা জরুরি, সাধারণ মানুষজন আমাদের সাংবাদিকদের প্রতি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখেন। পাশাপাশি আমাদের প্রতি তাদের থাকে প্রত্যাশা ও থাকে অনেক। কারন হিসেবে মনে রাখতে হবে এই সমাজে একজন সাংবাদিকের অনেক দায়িত্ব ও গুরুত্ব বহন করেন। আমার আপনার একটি নেতিবাচক সংবাদে অনেক নিরীহ মানুষ ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। অনেক অপরাধী পার পেয়ে যায়। আবার অনেক নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে এলাকা বা সমাজের দুর্নাম হয়ে যায়। এসব সংবাদ থেকে দূরে থাকা শ্রেয়।
বিচার-নির্বাহী-আইন বিভাগের পর ই সাংবাদিক বা সংবাদ পত্রের স্থান রয়েছে। এর জন্য সংবাদমাধ্যম কে বলা হয় রাস্ট্রের ৪র্থ স্তম্ভ।
তাই আমরা যারা সাংবাদিকতা করি সেই জায়গায় থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে সাংবাদিকতা করা জরুরি।
সাংবাদিকতা করতে হলে আগে দরকার শিক্ষাগত যোগ্যতা, তারপর সামাজিক ও নৈতিক যোগ্যতার প্রয়োজন। সাংবাদিকতার বিষয়ে অনেক লেখকের বই আছে সেগুলো নিয়মিত পড়াশোনা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকা পড়া প্রয়োজন। এতে আপনার আমার অনেক লাভ হবে, সেখান থেকে অনেক শেখার আছে সবার। নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়লে কারেন্ট নিউজ বা ফিচার নিউজ গুলো সেখান থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।
আমাদের মনে রাখতে হবে এই বানিয়াচং অনেক ইতিহাস ঐতিহ্য গ্রাম এটা, অনেক গুনী মানুষের জন্মস্থান এই গ্রামে। আমাদের বানিয়াচং থেকে অনেক গুনী মানুষ জাতীয় পর্যায়ে সাংবাদিকতা করছেন সুনামের সাথে। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রয়াত মন্ত্রী সিরাজুল হোসেন খান ও জাকারিয়া খান চৌধুরী। বর্তমানে সুনামের সাথে আছেন সিনিয়র সাংবাদিক দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু, আফসার আহমদ রূপক, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র সাংবাদিক সাখাওয়াত কাওসার, মানবজমিনের সিনিয়র সাংবাদিক লুৎফুর রহমান সহ অনেক গুনী সাংবাদিক। আমি সহ অনেকেই তাদের নিয়ে সব সময় গর্ববোধ করি। উনারা সবাই আমাদের বানিয়াচংয়ের গর্ব।
বানিয়াচং কে নিয়ে যদি আমরা নেতিবাচক সংবাদ পরিবেশন করি তা হলে পুরো বানিয়াচংয়ের বদনাম হয়। পাশাপাশি দেশ-বিদেশে অবস্থানরত বানিয়াচং বাসীর লজ্জা হয়। তাই আমাদের সবাই কে এই দিকটাও লক্ষ রাখা উচিৎ। বানিয়াচংয়ের ইদানীং লক্ষ করলে দেখা যাবে সামান্য বিষয় নিয় দাঙ্গা-হাঙ্গামা বেড়েই চলছে। এসব সংঘর্ষে প্রাণহানির মত ঘটনা নিত্য ঘটছে। এক সময় হবিগঞ্জ জেলার মধ্যে আমরা খুবই শান্তিপ্রিয় এলাকার সুনাম ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই সুনাম আর থাকল না। কারন সামান্য কারনে নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ বেধে যায়। সেখানেও আমাদের সাংবাদিকদের ভূমিকা রাখা প্রয়োজন। আমরা চাইলে নেতিবাচক কিছু সংবাদ বাদ দিতে পারি।
অনেক প্রতিনিধি আছে অতিউৎসাহী ভাবে সংবাদ পরিবেশেন করে থাকেন সেখানে ঘটনার থেকে পত্রিকায় ঘটনা ভিন্নভাবে ছাপা হয়। এসব নেতিবাচক সংবাদ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে আমাদের। আপনি আমি পক্ষে বিপক্ষে সংবাদ পরিবেশন করলেও কি হবে? সত্য ঘটনা কিন্তু বেড়িয়ে আসে অনায়াসে। কারন এখন কিন্তু সোস্যাল মিডিয়া খুবই তৎপর। সবার হাতে স্মার্ট ফোন আছে ঘটনার সাথে সাথে মোবাইলে রেকর্ড হয়ে যায় এবং সোস্যাল মিডিয়ায় ঘটনার বিবরণ উল্লেখ পাওয়া যায়। তাই এসব থেকে আমাদের কে আরো সর্তক থাকা প্রয়োজন। আমি সব সময় একটা কথা বলি, নতুন যারা এই মাধ্যমে আসছে তারা যেন সংবাদ লেখাটি শিখে নেয়ার চেষ্টা করে। কপি করে নিউজের দিন শেষ। অনেক সময় স্থানীয় পত্রিকা একই সংবাদ ভিন্ন নামে আসছে। এটা দেখে পাঠক মহলের সমালোচনা ঝড় উঠে। পাঠক মহল এসব সংবাদের তীব্র সমালোচনা করে থাকেন। তাই এখন সময় আছে, কপি নিউজ না করে নিজের মত করে নিউজ লিখা শুরু করতে হবে। সংবাদ পরিবেশনের আগে সরজমিন থেকে ঘটনা তত্ত্ব উপাত্ত জেনে নিউজ করা প্রয়োজন। নিয়মিত সাংবাদিকতা করতে হলে বাজারে প্রচুর বই পাওয়া যায় সেগুলো কিনে পড়তে হবে এবং শিখতে হবে। পাশাপাশি সিনিয়র সাংবাদিক যারা আছেন তাদের সংস্পর্শে থাকতে হবে। তাদের কাছ থেকে নিউজ লিখা শিখতে হবে। আচার-আচরণ ও শেখা দরকার আছে। কারন এটা সম্মান জনক পেশা। আপনার আমার জন্য এই পেশা যেন প্রশ্নের সম্মূখিন না হতে হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। মনে রাখতে আমরাও এই সমাজের অংশ। কোন ভাবেই যেন আমরা ফৌজদারি অপরাধের মধ্যে না পড়ি। কারন আইন সবার জন্য সমান।
সাংবাদিকদের নৈতিকতা ও পেশাগত দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেন, হবিগঞ্জ বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সাবেক জেলা প্রতিনিধি এবং সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট শেখ ফরহাদ এলাহী সেতু বলেন, সাংবাদিকতার এই মহান পেশায় আসতে হলে আগে নিজেকে শুদ্ধ করতে হবে। সাংবাদিকতার প্রচুর বই আছে সেগুলো পড়তে হবে। প্রতিদিন দৈনিক পত্রিকা পড়া খুবই প্রয়োজন। পাশাপাশি মফস্বল থেকে সাংবাদিকতা করতে হলে অবশ্য ই অন্য পেশার সাথে যুক্ত থাকা জরুরি। কারন আপনাকে উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে পত্রিকা অফিস থেকে বেতন বা ভাতাদি দিবে না। কিছু পত্রিকা আছে প্রতিনিধি কে সামান্য সম্মানি দেয়, সেগুলোর সংখ্যা খুবই সীমিত। যেহেতু মফস্বলে পেশাগত সাংবাদিকতা করার সুযোগ নেই সেহেতু অবশ্যই অন্য পেশার পাশাপাশি সাংবাদিকতা পেশা থাকা আবশ্যক। এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের ব্যাপারে ধারনা থাকা প্রয়োজন। জেনে শুনে সংবাদ পরিবেশন করা দরকার। সব সময় ইতিবাচক সংবাদ পরিবেশের উপর জোর দেন। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিকগণকে মানুষ শ্রদ্ধা করে সম্মান করে তাই এই পেশার সম্মান রাখা আপনার আমার দায়িত্ব। কোন ভাবেই ফৌজদারি অপরাধ হয় এমন সংবাদ থেকে বিরত থাকতে হবে সবাই কে।
বানিয়াচং প্রেসক্লাব সভাপতি ও সিনিয়র সাংবাদিক, দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকার প্রতিনিধি মোসাহেদ মিয়া উনার প্রতিক্রিয়া জানান, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এই পেশার প্রতি শ্রদ্ধা ও মমত্ববোধ না থাকলে এই পেশায় আসা উচিত না।
এই পেশার ব্যক্তিগণ সমাজ ও রাষ্ট্রের শ্রদ্ধাভাজন। ব্যক্তিগতভাবে সৎ-নিষ্টাবান ও পড়ালেখা জানা লোকদের এই পেশায় আসা উচিত।
আবদুল হক মামুন
লেখক-সাংবাদিক ও
সমাজকর্মী।
২৭ জানুয়ারি।