• ১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বরফে চাপা তানিলের ‘দিনবদলের স্বপ্ন’

Dainik Shallar Khabor.com
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৩, ২০২৩
বরফে চাপা তানিলের ‘দিনবদলের স্বপ্ন’

শাল্লার খবর ডেস্ক ::: তানিল আহমদ (২২)। স্বপ্ন দেখেছিলেন ইউরোপে গিয়ে দিনবদলের। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়ার পথে তুরস্কের বরফঢাকা অঞ্চলে ঠান্ডায় জমে মৃত্যু হয়েছে তার। এতে বরফেই চাপা পড়ে কলেজছাত্র তানিলের দিনবদলের স্বপ্ন।

তানিলের বাড়ি সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের ঠাকুরভোগ গ্রামে। তার বাবা মৃত গিয়াস উদ্দিন, মা সেলিনা বেগম। চার ভাইয়ের মধ্যে তানিল ছিলেন সবার বড়। স্থানীয় একটি কলেজে বিবিএ শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। এলাকায় ভালো ফুটবলার হিসেবে তার পরিচিতি ছিল। আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় ইউরোপে গিয়ে দিনবদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি।

ছেলের এমন মৃত্যুর কথা শুনে মা সেলিনা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

তানিলের চাচা নূর মিয়া বলেন, তানিল গত নভেম্বর মাসে প্রথমে দুবাই যান। পরে সেখান থেকে যান তুরস্কে। তানিলের তুরস্ক হয়ে গ্রিস যাওয়ার ব্যাপারে দালাল হিসেবে কাজ করেন একই গ্রামের ইরানপ্রবাসী শাহীন মিয়া। তার প্ররোচনাতেই তানিল বাড়ি ছাড়েন বলে তার অভিযোগ।

সোমবার রাতে তুরস্কে থাকা একই উপজেলার টাইলা গ্রামের মাসুম আহমদ মুঠোফোনে তানিলের বাড়িতে জানান, কয়েকজন দালালের মাধ্যমে হেঁটে তুরস্ক থেকে গ্রিসে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন তানিল। তখন তীব্র ঠান্ডা ছিল। তুরস্ক সীমান্তের কাছাকাছি একটি পাহাড়ে গিয়ে তানিল ঠান্ডায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানেই তিনি মারা যান। তিনি মুঠোফোনে মৃত তানিলের ছবিও পাঠিয়েছেন।

তানিলের চাচা নুর মিয়া বলেন, কীভাবে ভাতিজার লাশ দেশে আনবেন, তারা বুঝতে পারছেন না। ওখানে থাকা এলাকার লোকজনের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন। লাশ দেশে আনার মতো আর্থিক সংগতি তাদের নেই।

ঠাকুরভোগ গ্রামের বাসিন্দা মঈনুল আহমদ বলেন, তানিল খুব ভালো ছেলে। তার এমন মৃত্যুর খবর শুনে সবাই আফসোস করছেন।

স্থানীয় পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফুর রহমান জায়গীরদার বলেন, নানাভাবে দালালেরা তরুণদের ইউরোপে পাঠানোর জন্য প্ররোচিত করেন। একসময় তাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়ে। দুই মাস আগে জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার এক শিক্ষার্থী একইভাবে মারা গেছেন। এ বিষয়ে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

সুনামগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিপন কুমার মোদক বলেন, অবৈধভাবে দালালের প্ররোচনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ যাতে বিদেশে না যান, সে জন্য পুলিশ নানাভাবে মানুষজনকে সচেতন করে থাকে। ওপেন হাউস ডে, উঠান বৈঠকে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। বৈধ ভিসা নিয়ে কেউ কেউ দুবাই যান। পরে সেখান থেকে দালালের খপ্পরে পড়ে অন্যত্র যেতে গিয়ে বিপদে পড়েন তারা।