• ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৭শে রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

সাদাপাথর লুট: ‘প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংস্থার’ বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানে দুদক

Dainik Shallar Khabor.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৫
সাদাপাথর লুট: ‘প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংস্থার’ বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধানে দুদক

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ সীমান্ত এলাকায় সাদা পাথর উত্তোলন নিয়ে বহুল আলোচিত দুর্নীতির ঘটনায় অধিকতর তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের এ ঘটনায় প্রাথমিক অনুসন্ধানে রাজনীতিবিদ, প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অন্তত ৫৩ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলে।

বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

তিনি বলেন, “ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর লুটপাটের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে দুর্নীতির সত্যতা মিলেছে। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। অপরাধের মাত্রা ও জড়িতদের ভূমিকা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এর আগে গত ১৩ আগস্ট দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফি মো. নাজমুস সা’দাতের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি টিম ভোলাগঞ্জ এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে। তারা দেখতে পান—সীমান্তবর্তী পরিবেশ সংরক্ষিত এই এলাকায় অনুমোদন ছাড়াই পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন, বিজিবি টহল এবং পর্যটন বিভাগের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও গত কয়েক মাসে কয়েকশ কোটি টাকার পাথর তুলে নেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ আগস্ট ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর পরিদর্শনে যান দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাৎ-এর নেতৃত্বে গঠিত ৫ সদস্যের একটি দল। তারপর ধারাবাহিক অনুসন্ধান শেষে ১৬ আগস্ট প্রাথমিক প্রতিবেদন দুদক সদরদপ্তরে জমা দেয় জেলা কার্যালয়।

প্রতিবেদনে পাথর লুটে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা মিলিয়ে ৫৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে বলে জানায় দুদক। প্রতিবেদনে পাথর লুটে মহানগর বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক, মহানগর জামায়াতের আমির ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি, এনসিপির জেলা ও মহানগর সমন্বয়কসহ ৪২ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী সম্পৃক্ত বলে উল্লেখ করা হয়। এতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতারও নাম রয়েছে।

এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিজিবিসহ সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে পাথর লুটের জন্য অভিযুক্ত করা হয়।

এই প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর সিলেটে শুরু হয় তোলপাড়। সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতারা লুটকাণ্ডে সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে এই প্রতিবেদন নিয়েই প্রশ্ন তোলেন। এ ছাড়া এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে জামায়াত সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও এনসিপি স্মারকলিপি প্রদান করেছে। প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যেও দুদকের প্রতিবেদন নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে।

সোমবার সিলেট সফরে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সাদাপাথর লুট নিয়ে দুদকের প্রতিবেদন সরকার গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছে। প্রতিবেদনটি সত্য প্রমাণিত হলে, জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যদি তা অসত্য হয়, তবে দুদকের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্যদিকে দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে দায়ী করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুন্নাহার, কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায়, আবিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও কোম্পানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ উজায়ের আল মাহমুদ আদনান। এছাড়া বর্ডার গার্ডকেও দায়ী করা হয়েছে প্রতিবেদনে।