শান্তিগঞ্জ উপজেলায় প্রভাবশালীর হামলায় নজরুল ইসলাম (৪০) নামের এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত নজরুল জয়কলস ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন বলে ইউনিয়ন ও উপজেলার একাধিক বিএনপি- যুবদল নেতারা নিশ্চিত করেছেন। তার পিতা মরহুম আবদুল হাসিম।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো. জালাল হোসেনকে (৫৫) সংকটাপন্ন অবস্থায় সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের নোয়াখালী এলাকার জামলাবাজ গ্রামে। হতাহতের এই ঘটনায় প্রতিপক্ষের রুস্তম আলীর ছেলে আজাদ হোসেন ও জাকির মাহমুদের ছেলে আবদুস সত্তারকে গ্রেফতার করেছে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশ।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বাড়ির সীমানা সংক্রান্ত বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে জামলাবাজ গ্রামের মৃত মঈন উদ্দিনের ছেলে তাজ উদ্দিন ও নিহত নজরুল ইসলাম পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিলো। এ নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়ভাবে বৈঠকও হয়েছে। সর্বশেষ গত ৫ দিন আগে একই ইস্যুতে নিহতের মাকে মারধর করে প্রভাবশালী তাজ উদ্দিন ও তার পক্ষের লোকজন। আহত হন আপ্তাজান বানু। এই ঘটনার রেশেই রবিবার সকাল ৭টার দিকে কথা কাটাকাটিতে জড়ান দুইপক্ষ। একপর্যায়ে তাজ উদ্দিন পক্ষের ১৫/২০ জন লোক দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে নূরুল ইসলাম ও মো. জামাল হোসেনের উপর হামলা করেন। এই হামলায় ঘটনাস্থলেই গুরুতরভাবে আহত হন নজরুল ইসলাম ও মো. জামাল হোসেন। মারধর করে রাস্তায় ফেলে রেখে চলে যান তাজ উদ্দিনের লোকজন। পরে গুরুতর আহতাবস্থায় দু’জনকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক নজরুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করেন। মো. জামাল হোসেনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সংকটাপন্ন অবস্থায় সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ঘটনার দিন দুপুরে জামলাবাজ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নিহত তাজ উদ্দিনের বাড়িতে লোকজনের ভীড়। লাশ তখনো ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে। এক ছেলে হারিয়ে আর অপর ছেলে মৃত্যু শয্যায় থাকায় বার বার কান্নায় মূর্ছা যাচ্ছেন হতভাগ্য মা আপ্তাজান বানু৷ আত্মীয়স্বজনের কান্নায় ভারী উয়ে উঠেছিল চারপাশ। সবাই বলছিলেন, নিহত নজরুল খুব ভালো একজন লোক ছিলেন। বড় ছেলের কী হবে তা নিয়েই চিন্তিত সবাই। সন্ধ্যা ৬টায় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে তাই দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করেছেন নজরুলের ইসলামের বাড়িতে। এদিকে, অভিযুক্ত তাজ উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে প্রায় সবক’টি বাড়ির দরজা তালাবদ্ধ পাওয়া যায়।
নিহতের খালা ফয়জুন নেছা, ফুফাতো বোন রাহেনা বেগম ও চাচাতো ভাই মাহবুব আলম বলেন, তাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে আজ সকালে নজরুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে যায়। একদল মানুষ দু’জন মানুষকে পিটিয়েছে। হাতজোর করে অনুরোধ করেও বাঁচতে পারেনি নজরুল। প্রতিবেশী মৃত মঈন উদ্দিনের ছেলে তাজ উদ্দিন, মৃত ছালিম উল্লাহ্ ইকবাল হেসেন, আসকর হোসেন, মনোয়ার হোসেন, মরম আলীর ছেলে মাসুক মিয়া, বশির উদ্দিনের ছেলে রিয়াজ উদ্দিন, জসিম উদ্দিন, সালা উদ্দিন, আনর উদ্দিনের ছেলে সুমন মিয়া ও সিয়াম উদ্দিনসহ বেশ ক’জন মিলে আক্রমন করে। আমরা এই খুনের বিচার চাই।
শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম আলী জানান, মারপিটের খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে আজাদ হোসেন ও আবদুস সত্তার নামের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।