গত হয়েছে পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর। ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর মুসলমানদের পবিত্র এই দুই উপলক্ষ ঘিরে মুক্ত রাজনীতির চর্চা করেছে বিয়ানীবাজার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। গত ১৬ বছর এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিল বিরোধী দলগুলো। এবারের ঈদে ব্যতিক্রম ছিল শুধু পতিত আওয়ামী লীগ। টানা ১৬ বছর দেশ শাসন করে চরম কর্তৃত্ববাদী হয়ে ওঠা দলটির নেতাকর্মীদের বেশির ভাগই পলাতক না হয় আত্মগোপনে।
বর্তমানে রাজনীতির ময়দানে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্যসব রাজনৈতিক দলের নেতারা তৎপর। বিয়ানীবাজারে বেশী তৎপর বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। উপজেলার গ্রামীণ রাজনীতি বেশ জমিয়ে তুলছে দল দু’টি। নানা কর্মসূচি পালন করে সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়েছেন। ঈদের সময়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা জনসংযোগও করেছেন। সক্রিয় রয়েছেন বিএনপির তিন নেতা ও জামায়াতের একজন। তারা এ সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত হয়েছেন।
সূত্র জানায়, ডিসেম্বর বা জুন যখনই নির্বাচন হোক প্রতিদ্বন্ধি রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে। অনেক আসনে দলীয় প্রার্থীদের গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। তারা ইতিমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন। প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। ঘন ঘন এলাকায় যাচ্ছেন। ভোট ও রাজনীতির মাঠে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন পেতে সরব রয়েছেন ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করা ফয়সল আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম ও জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী। জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী ঢাকা উত্তরের আমীর মু. সেলিম উদ্দিনও ব্যাপক তৎপর। তবে বিএনপি-জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মীরা কেবল দলীয় এমপি প্রার্থীদের নিয়ে নয়, নিজেরাও বসছেন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। আইনশৃংখলা বাহিনীর দাবড়ানোর ভয়ে যারা এতদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন তারাও এখন দলীয় রাজনীতিতে বেশ সক্রিয়।
বিয়ানীবাজারের মানুষের সাথে পৃথক গণসংযোগে সেলিম উদ্দিন বলেছেন, বিগত প্রায় ১৬ বছর আওয়ামী লীগ দেশে অপশাসন-দুঃশাসন চালিয়েছে। আওয়ামী শাসনামলে সারা দেশে হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, গুম, অপহরণ, গুপ্তহত্যা চালিয়ে দেশকে একটি ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়াতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু দেশের নতুন প্রজন্ম বুকের তাজা রক্ত দিয়ে তাদের স্বৈরাচারী ও বাকশালী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে। এখন দেশবাসীকে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে হবে।
ফয়সল আহমদ চৌধুরী বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে এ আসনে তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। তারা কেবল গোলাপগঞ্জ- বিয়ানীবাজারবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়েছে। ছলনা প্রতারনা করেছে। লুটপাটের রাজনীতি করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তাদের নেত্রীর পথ ধরে তারাও পালিয়েছে। গোলাপগঞ্জ- বিয়ানীবাজারের উন্নয়নে বিএনপি সবসময় আন্তরিক।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী স্থানীয়ভাবে গণসংযোগকালে বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকার খুনি হাসিনা বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। হত্যা, গুম, খুন, লুটপাট, নৈরাজ্য-এসবের মাধ্যমে তারা দেশকে এক গভীর সংকটে ফেলেছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে, বিরোধী মতকে দমন করা হয়েছে, এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করে জনগণকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম জানান, দেশে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বিলম্বিত হলে ফ্যাসিস্ট শক্তি আবারও সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের বিপক্ষে কাজ করবে। নির্বাচন যত দেরি হবে, তত বেশি বাংলাদেশের পক্ষের শক্তিকে পরাজিত করার জন্য বিরুদ্ধ শক্তি-ফ্যাসিস্ট শক্তি মাথাচাড়া দিতে শুরু করবে।