• ১৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৪ঠা অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৭ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সাবেক আইজিপির ভাইয়ের তেলেসমাতি !

Dainik Shallar Khabor.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৪
সাবেক আইজিপির ভাইয়ের তেলেসমাতি !

শাল্লা প্রতিনিধি- সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় সরকারী খাস জমিতে মুজিবনগর বাজার তৈরীর নামে এলাকা থেকে প্রায় কোটি টাকার উপরে লোপাট করার অভিযোগ উঠছে শাল্লা উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের ছোট ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল-আমিন চৌধুরী) এর বিরুদ্ধে। জানা যায়, ২০২১ সালে সরকারী জমিতে ৪শ’ দোকান ভিটির বাজার নির্মাণের কর্মসূচি হাতে নেন আল আমিন চৌধুরী। এপ্রেক্ষিতে ওইসময়ে আল আমিন চৌধুরী তার নিজ গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে নিজ বাড়িতে এক মিটিং করেন। উল্লেখ্য, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অধীনে গুচ্ছ ভাবে ১শ’ ৫টি আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের মাধ্যমে মুজিবনগর গ্রামের সূত্রপাত হয়। তারই দক্ষিণ পাশের সরকারী খাস জমিতে মুজিবনগর বাজার নির্মানের সিদ্ধান্ত নেন ওই মিটিংয়ে। তবে মিটিংয়ের কোনো লিখিত রেজুলেশন খোঁজে পাওয়া যায়নি। ওই মিটিংয়ে আল আমিন চৌধুরী তার নিজস্ব ও প্রভাবশালী লোকজনের সমন্বয়ে বাজার নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনা কমিটি নামে একটি মৌখিক কমিটিও তৈরী করেন এবং এলাকার লোকজনের কাছ থেকে প্রতি দোকান ভিটির বিপরীতে ৩০হাজার টাকা হারে টাকা উত্তোলনের দায়িত্ব দেন ওই কমিটিকে। অনুসন্ধানে জানা যায়, শ্রীহাইল গ্রামের বাসিন্দা প্রখ্যাত খুনি ও আল আমিন চৌধুরীর ডানহাত আফজাল মিয়া, জুবায়ের আহমেদ ডালিম, জিয়া মেম্বার, হেকমত মিয়া, অরূপ মিয়া ও ইছাকপুর গ্রামের আশাদুল মিয়ার মাধ্যমে শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম তথা আশেপাশের উপজেলার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে ৪শ’ দোকান ভিটির বিপরীতে ১কোটি ২০লক্ষ টাকা উত্তোলন করা হয়। কিন্তু ৪বছরেও মুজিবনগর বাজারের কোনো দর্শনীয় কার্যক্রম না হওয়ায় টাকা দেয়া লোকজন পড়েছেন বিপাকে। এবিষয়ে মুজিবনগর বাজার কমিটির সদস্য আফজল মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমরা চধরী সাবের কথামতো এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা উঠিয়েছি। তবে আমি যে টাকা উঠিয়েছি, তার সব টাকাই আমি চধরী সাবকে দিয়েছি। কত জনের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, রসিদ দেখে বলতে হবে ভাই। যাদের কাছ থেকে টাকা এনেছি, তাদেরকে রসিদ দিয়েছি বলে জানিয়েছেন তিনি। মুজিবনগর বাজারে কতটি ভিটি করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৪শ’ ভিট হবে ভাই। কমিটির অন্যতম সদস্য জুবায়ের আহমদ ডালিমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ৪৯জনের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছি। আল আমিন সাহেবের নির্দেশে কিছু টাকার মাটি কাটিয়েছি এবং বাকি টাকা আল আমিন সাহেবকে দিয়েছি। বাজার কেন হচ্ছে না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারব না, আল আমিন সাহেবই ভালো বলতে পারবেন। অনুরূপ ভাবে অরূপ মিয়া, জিয়া মেম্বার ও হেকমত মিয়া জানান তারাও টাকা উত্তোলন করে আল আমিন চৌধুরীকে দিয়েছেন। তারা আরো জানিয়েছেন, চৌধুরী সাহেবের কথায় বাজারের নামে টাকা উঠিয়ে তারাও বিপাকে পড়েছেন। লোকজনকে দিতে পারছেন না দোকান ভিট, ফিরিয়ে দিতে পারছেন না টাকাও। তবে শ্রীহাইল গ্রামের দুলাল মিয়া জানান, তিনি ৩টি দোকান ভিটির জন্য ৯০হাজার টাকা আল আমিন চৌধুরীকে সরাসরি দিয়েছেন। টাকাটা কখন দিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম মিটিংয়েই উপস্থিত লোকজনের সামনেই তিনি দিয়েছেন। টাকা উত্তোলনের বিষয়ে ইছাকপুর গ্রামের আশাদুল মিয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ১৬টি ভিটির টাকা উঠিয়েছি এবং আল আমিন চৌধুরীর সরকারী বাস ভবনে গিয়ে আল আমিন চৌধুরীর কথায় ডুমরা গ্রামের চয়ন চৌধুরীর কাছে ১লক্ষ ৯০হাজার টাকা এবং কমিটির সদস্য ডালিমের কাছে অবশিষ্ট ২লক্ষ ৯০টাকা জমা দিয়েছি। তবে চয়ন চৌধুরী বিষয়টি অস্বীকার করেন। অন্যদিকে সরকারী খাস জায়গায় বাজার করার বিষয়ে সরকারী লাইসেন্স প্রথায়
দোকান ভিটি বন্দোবস্তের খোঁজ নিতে শাল্লা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে দেখা যায় এ সম্পর্কিত কোনো ডকুমেন্ট সংরক্ষিত নেই। অপরদিকে উপজেলার দামপুর গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ মিয়া ১টি ভিটির ও কান্দিগাঁও গ্রামের সুন্দর আলীর স্ত্রী ও সাবেক মহিলা মেম্বার মনোয়ারা বেগম এপ্রতিবেদককে জানান তিনিও মুজিবনগর বাজারে ২টি দোকান ভিটের জন্য টাকা দিয়েছেন। কার কাছে টাকা দিয়েছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা শ্রীহাইল গ্রামের আল আমিন সাহেবের আস্তাভাজন আফজল মিয়ার কাছে টাকা দিয়েছি। গত ৫অগষ্টের পর থেকে শাল্লা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং সাবেক পুলিশ মহাপরির্দশকের ছোট ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এলাকায় না থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার মুঠোফোনে বার বার যোগাযোগ করে ও তার ব্যবহৃত ওয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে খুদে বার্তা পাঠিয়েও কোন প্রতিউত্তর না পাওয়ায় তার বক্তব্য দেয়া সম্ভব হয়নি। এব্যাপারে ৪নং শাল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সাত্তার মিয়ার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টা আমার পিরিয়ডে নয়, তবে আমি শুনেছি, শ্রীহাইল গ্রামের আল আমিন চৌধুরী ও তার লোকজন মুজিবনগরের কাছে একটি বাজার করবে বলে বিভিন্ন লোকজনের মাধ্যমে অনেক টাকা উত্তোলন করেছে। তিনি আরো
বলেন, এখানে বাজার হবে না। তাই আমি মনে করি এলাকার লোকজনের কাছ থেকে যে বা যারাই দোকান ভিট দেয়ার কথা বলে টাকা উঠিয়েছে, তাদের টাকা ফেরৎ দিক। অন্যথায় ভবিষ্যতে এলাকায় এ নিয়ে আইন-শৃংখলার চরম অবনতি ঘটবে।