• ২০শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শাল্লায় অসংখ্য নতুনগ্রাম, বিদ্যালয় ও ক্লিনিক প্লাবিত : খুলে দেওয়া হয়েছে সব আশ্রয় কেন্দ্র

Dainik Shallar Khabor.com
প্রকাশিত জুন ২১, ২০২৪
শাল্লায় অসংখ্য নতুনগ্রাম, বিদ্যালয় ও ক্লিনিক প্লাবিত : খুলে দেওয়া হয়েছে সব আশ্রয় কেন্দ্র

সন্দীপন তালুকদার সুজন, শাল্লা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি: টানা কয়েক দিনের পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে নেমে আসা পানি ঢুকছে হাওরে। হাওরের পানি বেড়ে উপজেলার নতুন গ্রামগুলোতে দেখা দিয়েছে বন্যা। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষজনের। বৃষ্টির পরিমাণ অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। আর উজানে বৃষ্টি না হলেও সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি হাওরে ঢুকে অন্তত ১ ফুট পানি বৃদ্ধি সম্ভাবনা থেকে যায়। আর পানি বৃদ্ধি ফলেই ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা থেকে মুক্ত হচ্ছে না শাল্লা উপজেলাবাসী। এছাড়া লোডশেডিং কারনে ভোগান্তি আরও বেড়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, শাল্লার ৪টি ইউনিয়নের বন্যার পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলার ১১৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে এরমধ্যে ৩টি সাইক্লোন সেন্টারও আছে। এ অবস্থায় ৬০৬জন মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। আশ্রিত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১ লক্ষ টাকা ও ৫৫ মেট্রিকটন চাল বানভাসীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহ মো: সজীব হোসাইন বলেন, সিলেটে গতকাল থেকে আজ পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আগামী ৭২ ঘন্টা মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার পূর্ভাবাস রয়েছে।

এই ব্যাপারে মাননীয় এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তা বলেন, বন্যা কবলিত সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে ও নিরাপদে থাকার জন্য বলছি। আমার নির্বাচনী এলাকা শাল্লাবাসী সবাইকে এই বিপদের দিনে যেন আর্ত জনগণের পাশে থাকে এই আহ্বান এবং প্রার্থনা জানাচ্ছি।

বন্যায় প্লাবিত লোকজন আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এগুলোর হিসাব নাই। সারা বছর কষ্ট করে ধান ফলাই, এখন বানের পানিতে এই ধান ভাইস্যা যায়। গরুর খাবার (খের) নষ্ট হয়। কোন উপায় না পাইয়া কমদামে ধান ও গরু বেচন (বিক্রি) লাগে। গরু বাছুর লইয়া যাইমু কই, বাচ্চা খাচ্চা লইয়া মানুষ বাচনই দায়। ঘরবাড়ি আফালে (ঢেউ) ভাইঙ্গা নেয়। বাধ্য অইয়া বাঁচার লাগি স্কুলে (আশ্রয়কেন্দ্র) আইলাম। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ভেতরে পানি ঢুকেছে। কোথাও কোথাও হাঁটু পানি বা এরচেয়ে বেশি বলে দাবি করেছেন বাসিন্দারা। এ ছাড়া বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারের সড়ক ডুবে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি স্থানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে, কিছু মানুষ বন্যার ভয়ে আগে থেকেই তাদের মূল্যবান জিনিসপত্র অন্যত্র (উঁচু) স্থানে নিরাপদে রাখছেন বলে জানান।

যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক সতর্ক আছেন বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো: আলাউদ্দিন। আমাদের কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে, এখানে নাম্বার দেওয়া আছে যেকোন ধরনের সমস্যা হলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত আছি। বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শরনার্থীদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করছি।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ১ লক্ষ টাকা ও ৫৫ মেট্রিকটন চালও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা এই সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্মকর্তা সজীব হওলাদার জানান, আমিতো ইদের ছুটি আছি। যেগুলো মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে ঐখানে গবাদিপশু নিয়েছে। গবাদিপশুর তেমন কোন ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাই, তবে গবাদিপশুর খাবারগুলো (খড়) নষ্ট হয়ে যাইতে পারে। সঠিক তথ্য জানতে চাইলে প্রতিবেদকে জানান, দেখতেছিতো আপনি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছেন সেসময় তথ্যগুলো নিতেও পারতেন ! তবে সংখ্যা বা কতগুলো আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছে এগুলো ডিটারমাইন্ড করি নাই। সবাইতো ইদের ছুটিতে আছে। তারপরেও আমি দেখতেছি অফিস স্টাফের সাথে কথা বলে। তবে গবাদিপশুর চিকিৎসার জন্য আমরা একটা মেডিক্যাল টিম গঠন করেছি।

সুনামগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কার্যালয় সূত্রে জানাযায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় নিম্নাঞ্চল সিলেট, সুনামগঞ্জ জেলায় চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। সিলেট (সুরমা)+১৪ সে.মি, সুনামগঞ্জ (সুরমা)+৬ সে.মি, মার্কুলি (কুশিয়ারা)+৩৪ সে.মি বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

উজানের পানি নেমে আসায় উপজেলার অনেক এলাকায় বন্যার পানি ক্রমেই বাড়ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে উপজেলার অসংখ্য নতুন গ্রাম ও বিভিন্ন বাজারে পানি উঠায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। শাশখাই, টুকচাঁন, প্রতাপপুর, দাঁড়াইন বাজারের পানি উঠায় অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাজারের রাস্তার উপর দিয়ে মানুষজন নৌকায় চলাচল করছে। মহিম চন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় সহ আরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উঠেছে পানি বাদ যায়নি কমিউনিটি ক্লিনিকও।

উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অরিন্দম চৌধুরী অপু জানান, বন্যার পরিস্থিতি পরিলক্ষিত করে ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করেই শুরু থেকে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করছি এবং এটা চলমান থাকবে। যেখানে সমস্যা দেখছি সেখানে মানুষের সাথে কথা বলে আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। আশ্রয় কেন্দ্রে কোন সমস্যা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করছি। আমাদের মাননীয় এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তা মহোদয় সার্বক্ষণিক বন্যা কবলিত মানুষের খোঁজখবর নিচ্ছেন। কোন মানুষ ও প্রাণীর যেন ক্ষতি না হয় সেই ভাবে কাজ করার নির্দেশনা উনি (এমপি) দিয়েছেন।

বাংলাদেশ বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সুনামগঞ্জ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী আবু নুঈমান জানান, বন্যা দুর্যোগকালীন সময় আমরা চেষ্টা করেছি বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিতে। আপনাদের শাল্লায় দুইদিন বিদ্যুত সাপ্লাই বন্ধ ছিল। অনেকসময় অতিরিক্ত ঝড়বৃষ্টির কারণে লাইনে ফল্ট হলে লোডশেডিং হয়। তবে লোডশেডিং হলে আমরা তাৎক্ষণিক ফল্ট খুঁজে সমাধান করার চেষ্টা করি।