শাল্লার খবর ডেস্ক ::: সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও এখন মেয়র পদে কারা প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে রহস্য রয়ে গেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ছাড়া আর কারো প্রার্থিতাই চূড়ান্ত নয়। সম্ভাব্য প্রার্থীরাও বলছেন না কিছু। ধীরে চলো নীতিতে এগুচ্ছেন তারা। এ অবস্থায় মেয়র পদের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বিভিন্ন দলের একাধিক নেতার নাম আলোচিত হচ্ছে। এরমধ্যে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুজন প্রভাবশালী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এই দুই নেতা হচ্ছেন ২০২১ সালের আগস্টে পদত্যাগকারী কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান জামান ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফয়জুল আনোয়ার আলাওর। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলে তাদের ঘনিষ্ঠজনেরা আভাস দিয়েছেন। এছাড়া সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমও প্রার্থী হতে আগ্রহী।
একই সূত্র জানিয়েছে, শেষ পর্যন্ত বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করলে সামসুজ্জামান ও ফয়জুলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা বেশি। অন্যদিকে আরিফুল নির্বাচনে অংশ নিলে বদরুজ্জামানও অংশ নিতে চান। আরিফুল ও বদরুজ্জামান একই দলের নেতা হলেও স্থানীয়ভাবে তাদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুজন নেতা জানান, বিএনপির সরকারবিরোধী দলীয় অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত মেয়র আরিফুল নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান যেন খালি মাঠে গোল দিতে না পারেন, সে জন্য আওয়ামী লীগের নেতা ফয়জুল আনোয়ার ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হতে পারেন। একই কারণে বিএনপির সাবেক নেতা সামসুজ্জামান জামানও প্রার্থী হতে চান।
সিলেট বিএনপির একসময়ের আলোচিত নেতা ছিলেন সামসুজ্জামান জামান। ১৯৮৫ সালে ছাত্রদলে যোগদানের মধ্য দিয়ে তাঁর রাজনীতিতে হাতেখড়ি। ধীরে ধীরে তার আধিপত্য বাড়ে। একসময় বিএনপি ও এর সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলোতে তার বিশাল বলয় তৈরি হয়। তবে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১৮ আগস্ট সামসুজ্জামান কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। জামানের ঘোষণার পর তার অনুসারী বিএনপি এবং অঙ্গসংগঠনের জেলা ও মহানগর পর্যায়ের প্রায় তিন শ পদধারী নেতা কয়েক দিনের ব্যবধানে পদত্যাগ করেন।
জামানের অনুসারীরা বলছেন, বিএনপি থেকে পদত্যাগ করলেও দল ও দলের বাইরে সামসুজ্জামানের এখনো একটা কর্মিবাহিনী রয়েছে। সম্প্রতি একাধিকবার তিনি তাঁর সমর্থক কর্মীদের নিয়ে নানা ধরনের সভাও করেছেন। এখন সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর সামসুজ্জামান আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছেন। তিনি নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে পারেন, এমন প্রচারণা তাঁর সমর্থকেরা চালাচ্ছেন।
যোগাযোগ করলে সামসুজ্জামান জামান বলেন, ‘নির্বাচন করার জন্য সিলেট নগরের সুশীল সমাজ, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক-সামাজিক অঙ্গনের নেতাসহ সাধারণ মানুষের প্রেশার (চাপ) আছে। এ বিষয়ে আমি এখনো চিন্তা করিনি। তবে বিষয়টি নিয়ে ভাবছি।’
২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামান মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃতীয় হন। এখন নগরে তার অবস্থান আরও পাকাপোক্ত হয়েছে বলে মনে করেন জামান সমর্থকেরা।
দোটানায় আছেন ফয়জুল
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফয়জুল আনোয়ার আলাওর সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন তিনি। সম্প্রতি সিলেট নগরবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর পক্ষে নগরে অসংখ্য পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। এর পর থেকেই মেয়র পদে তিনি আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হচ্ছেন বলে নগরে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, সিলেট মহানগরের রাজনীতির সঙ্গে কোনো দিন যুক্ত না থেকেও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন। এতে অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ দলের একটা অংশ ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হয়। একই সঙ্গে বিএনপির সরকারবিরোধী অবস্থানের কারণে বর্তমান মেয়র আরিফুলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সম্ভাবনাও আছে। এ অবস্থায় অনেকেই চাইছেন ফয়জুল আনোয়ার যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। এতে করে আওয়ামী লীগের ক্ষুব্ধ অংশের ভোট ও আওয়ামী লীগের বিপক্ষ ঘরানার ভোট তাঁর পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
এ বিষয়ে ফয়জুল আনোয়ার খোলাসা করে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘আমার রাজনীতির বয়স প্রায় ৪৮ বছর। নৌকার বিপরীতে নির্বাচন করার বিষয়টি কখনো কল্পনাতেও আসেনি। তবে নগরবাসীর কিছু চাহিদা আছে। তাঁরা নগরের একজন পরীক্ষিত মানুষকে নির্বাচনে দেখতে চাইছেন। তাই অনেকে চাচ্ছেন, আমি যেন নির্বাচনে আসি। এসব মিলে দোটানার মধ্যে আছি।’
নির্বাচনে আগ্রহী বদরুজ্জামান
সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন তৎকালীন সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে তখন ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হন। যদিও শেষ পর্যন্ত দলের অনুরোধে বিএনপির দলীয় প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর সমর্থনে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
২০১৮ সালের ওই সিটি নির্বাচনের পর থেকে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে বদরুজ্জামান অনেকটাই ‘উধাও’ হয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান। মাঝেমধ্যে দেশে এলেও সেখানে পরিবারের কাছেই মূলত বেশির ভাগ সময় কাটাতে থাকেন। এরপর গত ১০ মার্চ মহানগর বিএনপির যে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, তখন সভাপতি পদে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে পুনরায় আলোচনায় আসেন বদরুজ্জামান। তবে তখনো দলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনুরোধে সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে সরে দাঁড়ান।
বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে, একই দলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে বদরুজ্জামানের দূরত্ব আছে। তাই, যদি কোনো কারণে মত পাল্টে বিএনপি নির্বাচনে আসে, তাহলে বদরুজ্জামানও বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। যদি আরিফুল দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন, তাহলে বদরুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন।
বর্তমানে বদরুজ্জামান লন্ডনে আছেন। হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নির্বাচনের এখনো বেশ সময় বাকি আছে। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও প্রচুর আছে। এ ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন কি না, এটাও বড় প্রশ্ন। পাশাপাশি সুষ্ঠু ভোট নিয়েও সন্দেহ আছে। তবে ঈদের পরপরই দেশে ফিরে পরিস্থিতি যাচাই–বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হবে। ২৩ মে পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১ জুন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।