শাল্লার খবর ডেস্ক ::: চলতি বছর বজ্রপাত থেকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার কৃষকদের রক্ষায় তুরস্কের তৈরি দুটি লাইটেনিং এরেস্টার টাওয়ার (বজ্রনিরোধক দণ্ড) স্থাপন করা হয়েছে। যে এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে সেই এলাকার হাওরের তিনশত ফুট এরিয়ার ভেতরে বজ্রপাত হলে তা টেনে মাটিতে নামাবে। এতে করে কৃষক,জেলে,গাছপালা ও গবাদিপশু বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাবে।
পাইলট প্রকল্পের আওতায় চলতি বছর তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরে ১টি ও দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের হালির হাওরে এলাকায় ১টি লাইটেনিং এরেস্টার টাওয়ার স্থাপন করেছে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম বলে জানান ২৩ টি ছোট বড় হাওরের কৃষকগন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি বছর মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত হাওর বেষ্টিত এই এলাকা গুলোতে বজ্রপাত হয়। বজ্রপাত শুরু হলে কৃষক পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আতংকে থাকে। বজ্রপাতে বিপুল সংখ্যক কৃষক, শ্রমিক, জেলের মৃত্যু হয় ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গৃহপালিত গবাদিপশু গাছপালা। বজ্রপাতের কারণে হাওরাঞ্চলে কৃষকরা হাওরের জমিতে, বাড়ি পাশে শাক সবজি ক্ষেতে কাজ করতে পারেন না। বর্ষায় জেলেরাও হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে বিপদে পড়েন। গৃহিণীরাও বাড়ির আঙিনায় কাজকর্ম করতে পারেন না।
তাহিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজি মাসুদুর রহমান জানান, বজ্রপাত থেকে রক্ষায় শনির ও হালি হাওড়ের উন্মুক্ত প্রান্তরে ৪০ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট লাইটেনিং এরেস্টার টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটি দণ্ড স্থাপনে ৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রতিটি টাওয়ার ১০৭মিটার রেডিয়াসে থাকা লোকজন পশুপাখি গাছপালা গবাদিপশুকে বজ্রপাত থেকে রক্ষা করবে। তুরস্কের তৈরি প্রতিটি ডিভাইসে রয়েছে কপারচিপ, ডিজিটাল কাউন্টার ডিভাইস, কপার রড, জাঙ্কশন বক্সসহ নানা ইলেকট্রনিকস ডিভাইস। প্রতিটি টাওয়ার মাত্র ৬০মাইক্রোসেন্ড সময়ের মধ্যে আকাশে হওয়া বজ্রপাতকে মাটিতে টেনে নিয়ে আসবে। এই এলাকায় আর বজ্রনিরোধক দণ্ড স্থাপনকরা প্রয়োজন।
তিনি আরও জানান, গত বছর তিন ও চলতি বছরের মাচ মাসে ১জন মারা গেছে।
উপজেলার ছোট বড় ২৩ টি হাওর রয়েছে। বজ্রপাতের মৃত্যু থেকে বাঁচতে আরও বেশি পরিমাণ বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের দাবি জানিয়ে শনির হাওরের কৃষক সাদেক আলী বলেন,বজ্র নিরোধক দণ্ড যে এলাকায় স্থাপন করা হয় সেই এলাকায় কাজ করা হবে। এতে করে হাওরে কর্মরত কৃষক, জেলেরা বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাবে। তবে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের পরিমাণ আরও বাড়ানো উচিত।
টাংগুয়ার হাওরের কৃষাণী হালিমা বেগম জানান, বৈশাখ মাসে হাওরে ধান কাটার সময় হাওরে বজ্রপাতের কারণে পুরুষদের নিয়ে আমরা উৎবেগ আর উৎকণ্ঠা থাকি। হাওরে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হলে নিরাপদে হাওর থেকে ধান কেটে বাড়ি নিয়ে আসতে পারবে আর আমাদের ও চিন্তা করতে হবে না।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা সূত্রে জানাযায়, গত পাঁচ বছরে জেলার ১২টি উপজেলায় বজ্রপাতে নিহত ৬০টি পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করেছে। কিন্তু বজ্রপাতে নিহতের তালিকা ও অনুদানের বাহিরে বেসরকারি ভাবে বেশী এর সংখ্যা দ্বিগুণ রয়েছে। যদিও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে বজ্রপাত নিহতের সঠিক তথ্য না থাকলেও ২০১৪-১৭ সাল পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ও ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত অর্ধশত নারী পুরুষে নিহতের তথ্য রয়েছে গণমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থার কাছে।
হাওর বেষ্টিত দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মুরাদ বলেন, হাওর এলাকায় বজ্রপাত বেশি হয়। বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের পাশাপাশী সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্তক থাকলে দূর্ঘটনার কমে আসবে। আমার ইউনিয়নে আরও বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের দাবী জানাই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা জানান,হাওর এলাকায় বজ্রপাত পরিমাণ বেশি। এ উপজেলায় বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। এসব বজ্রনিরোধক দণ্ড পর্যায়ক্রমে সব জায়গায় স্থাপন করা হবে বলে।