শাল্লার খবর ডেস্ক ::: স্থানীয় সরকারের সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি, তবে ইতোমধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগর। তবে প্রচার চালানো সবাই আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী।
সিটি নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা যখন মাঠে নেমেছেন, নানাভাবে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন, তখনও বিএনপির নেতাদের এখন পর্যন্ত কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
সিসিকের গত দুই নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। টানা দুই মেয়াদে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আরিফুলের জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে বলে মনে করা হয়। তবে এবার বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সরকার পতন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি।
এ অবস্থায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা, তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।
আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সিলেটসহ পাঁচ সিটিতে নির্বাচন হবে বলে কয়েকদিন আগে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। গত রোববার নির্বাচন ভবনের নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমনটি জানান।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থীর হওয়ার বিষয়ে সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। এ ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্তই মেনে নেব।’
মেয়র আরিফুল হকের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, বিএনপির চলমান আন্দোলনে সক্রিয় থাকলেও নিজের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন আরিফ। শেষ সময়ে তিনি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেবেন। দল নির্বাচনে না গেলেও নাগরিক কমিটির ব্যানারে প্রার্থী হতে পারেন মেয়র আরিফ।
ওই সূত্রের দাবি, ‘সিলেট সিটিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রার্থী ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র প্রয়াত বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে কামরানকে হারিয়েই মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল। ২০২০ সালে কামরানের মৃত্যুর কারণে এবার সিলেটে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কোনো প্রার্থী নেই। ফলে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’ হলে আরিফুলের জয় অনেকটাই সহজ হবে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এটি বুঝিয়ে শেষ মুহূর্তে তিনি নির্বাচনে রাজি করাতে পারেন অথবা শীর্ষ নেতাদের সম্মতি নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেন।’
সবকিছুই সে সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে জানিয়ে আরিফুলের ঘনিষ্ঠ বিএনপির ওই সূত্র জানায়, সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৪ আসনে বিএনপির মনোনয়ন চাইছেন আরিফুল। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিলে এবং সে নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে সিটি নির্বাচনে আরিফুল অংশ নাও নিতে পারেন।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট সরকারের আমলে আরিফুল হক চৌধুরী সিসিকের একটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম. সাইফুর রহমানের আশীর্বাদে তিনি সিলেটের প্রভাবশালী নেতায় পরিণত হন। তাকে ‘ডিপ্লোম্যাটিক লিডার’ হিসেবে আখ্যা দেন সাইফুর।
সে সময় ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে আরিফের বিরুদ্ধে। ১/১১ উদ্ভূত সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা দেশের শীর্ষ ৫০ দুর্নীতিবাজের তালিকায়ও ওঠে আসে আরিফের নাম। সে সময় গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর কিছুদিন রাজনীতির আড়ালে চলে যান।
২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের শাসনামলে তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন আরিফুল।
সিসিক নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এখনও নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়নি। তফসিল ঘোষণার পর দল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। তাছাড়া আমরা এখন সরকার পতনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছি। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না।’
এদিকে বিএনপি নীরব থাকলেও আওয়ামী লীগে রীতিমতো প্রার্থী জট দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাদের পোস্টার, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগর। এছাড়া জনসংযোগও শুরু করে দিয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, এবার সিটি নির্বাচনে বিএনপি নাও অংশ নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়ন পেলে জয় পাওয়া নিশ্চিত। তাই দলীয় মনোনয়নের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, দলের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সিলেট মহানগরের সহসভাপতি আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল ও কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, সদস্য প্রিন্স সদরুজ্জামান এবং বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ছেলে ডা. আরমান আহমদ শিপলু।
এদের মধ্যে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দলের হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে প্রচার চালাচ্ছেন। আরিফুলের প্রার্থিতা নিয়ে আনোয়ারুজ্জামান বলেন, ‘বিএনপি বা আরিফুল হক নির্বাচনে অংশ নেবেন কিনা, এটা তাদের বিষয়। এ নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই। আমি দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত চারবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবার আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। প্রথম দুইবার বদরউদ্দিন আহমদ কামরান নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের সবশেষ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী ৯২ হাজার ৫৮৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পান ৮৬ হাজার ৩৯২ ভোট। এরআগে ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরী ১ লাখ ৭ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন; ওই সময়ও তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বদরউদ্দিন আহমেদ কামরান। কামরান পেয়েছিলেন ৭২ হাজার ১৭৩ ভোট।