• ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শাল্লায় হাওড়রক্ষা বাঁধের দুর্নীতি ঢাকতে সাংবাদিকদের পিআইসি উপহার

Dainik Shallar Khabor.com
প্রকাশিত মার্চ ১২, ২০২৩
শাল্লায় হাওড়রক্ষা বাঁধের দুর্নীতি ঢাকতে সাংবাদিকদের পিআইসি উপহার
স্টাফ রিপোর্টার: সুনামগঞ্জের শাল্লায় নীতিমালার তোয়াক্কা না করে হাওরে জমি নেই এমন তিন সাংবাদিককে প্রায় ২৫লাখ টাকার প্রকল্প উপহার দিয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি। বুধবার ও  বৃহস্পতিবার (৮-৯ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় উপজেলার ভান্ডাবিল হাওর উপ-প্রকল্পের আওতায় ২৭নং পিআইসির বাঁধে কোনো সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ভান্ডাবিল হাওরের নতুন বৈশাখালি ভাঙা হতে ১৪৬ মিটার অক্ষত বাঁধে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৪লাখ ৯৭হাজার ৮শ’ ৩২টাকা ৫৫ পয়সা।
স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ এইসব সাংবাদিকদের ভান্ডাবিল হাওরে কোনো জমিই নেই। অথচ প্রকৃত সুবিধাভোগী কৃষকদের বাদ দিয়ে দুর্নীতিকে আড়াল করতে সাংবাদিকদের ওই পিআইসি দেওয়া হয়েছে বলে জানান হবিবপুর ইউপির বাঁধ সংলগ্ন গ্রাম মৌরাপুর গ্রামের কৃষকরা।
মৌরাপুর গ্রামের সঞ্জয় দাস বলেন, শান্ত দাসের বাড়ি নারকিলা, বকুল আহমেদের বাড়ি শাল্লা ইউপির দামপুর, বিপ্লব রায়ের বাড়ি আনন্দপুর গ্রামে এই হাওরে এদের কোন জমিন নাই। একেকজনের বাড়ি বাঁধ থাইক্কা ২০/৩০ কিলোমিটার দূরে এরা সবাই থাকে ঘুঙ্গিয়ারগাঁও বাজারে শুনছি হেরা নাকি সাংবাদিক। এদের বাঁধও টেকসই হয়নাই কাজও বাকি রইছে। ভান্ডা এখনই ঠেইল্লা পইরা গেছেগা এখন বৃষ্টি হইলেওই বানডা(বাঁধ) ভাইঙ্গা যাইবগা। এরার যেহেতু জমিন নাই এরাত নিজের মন কইরা বানডা ভালা করত না। এরা পিআইসি পায় কিভাবে এমন প্রশ্ন করেন তিনি।
ভান্ডাবিল হাওরের ২৬ নং পিআইসির সদস্য রবীন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, তারা যে পিআইসি আনছে তাদেরত একগুটা জমি নাই এই হাওরে। আমাদের ২৬ নং পিআইসির মধ্যে একটু অংশে তাদের ঢুকাই দিছে। আমাদের ২৬ নং পিআইসির ৭২৮ মিটার বরাদ্দ দিছে মাত্র ২০ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আর তাদের মাত্র ১৪৬ মিটার অংশে বরাদ্দ দিছে ২৫ লাখ টাকা। আমরা গরীব মানুষ কিছু মাছ টাছ মাইরা খাই এরার বিরুদ্ধে কিছু কইলে পুলিশ পাঠাইয়া আমাদের হয়রানি করে। আমাদের অনেক ক্ষতি করছে এরা মানুষ অখন ডরাইয়া এরার বিরুদ্ধে কিছু কইত চায় না। এরার বাঁধে মাত্র ৩ লাখ টাকার মাটি কাটছে বলে জানান তিনি।
একই গ্রামের অশুক চন্দ্র দাস বলেন, প্রতিবাদ করতে গিয়া চড় খাইতাম নি। এখন যদি পানিয়ে ঢেক্কা দেয় পইলা আমার ক্ষেত তলে যাইব। ইতা কইবার যায়গা নাই শাল্লা থানাত। কানবার জায়গা নাই আমরার। শান্ত দাসের বাঁধে ২৫ লাখ টাকা পাইছে। এরার ২/৪লাখ টাকা খরচ অইব। সব লুটপাট চলছে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা (এসও) আব্দুল কাইয়ুমের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ফোন তুলেন নি তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, ৫১, ৫৭ উপর দিয়ে অন্য পিআইসির গাড়ি চলাচলের কারনে তারা কাজ শুরু করতে পারেন নাই। আমাদের দুইটা পিআইসি মাটির কাজ বাকি আছে। অনান্য পিআইসির ড্রেসিংয়ের কাজ বাকি আছে। কত পার্সেন্ট কাজ হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই মূহুর্তে আমি বলতে পারব না। তবে আজকে সন্ধ্যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়েবসাইটে দিবেন বলে জানান তিনি। সাংবাদিকদের ২৭ নং পিআইসির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা ত কম্পিউটারে কাজ করার সময় আমার সামনে কাগজপত্র দিছে। তারাত গত বছরও কাজ করেছে। কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রেক্ষিতেই তাদের পিআইসি দেওয়া হয়েছে। মৌরাপুর গ্রাম থেকে তাদের জমি নেই হাওরে এমন অভিযোগ তার কাছে পৌঁছেনি বলে জানান উপজেলা কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সভাপতি।
কৃষকদের নিয়ে ৫ থেকে ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করার কথা। নিয়ম থাকলেও নীতিমালার তোয়াক্কা না করে উপজেলার তিন সাংবাদিককে পিআইসি উপহার দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।