স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জে শাল্লায় ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে উপজেলার ৭টি হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ দেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড। ফলে ঝুকিতে রয়েছে ওই ৭টি হাওরের প্রায় দুই হাজার হেক্টর বোরোজমির ফসল। হাওররক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে নতুন করে হাওরে আর বাঁধ দেয়ার সুযোগ নেই। অথচ গোবরহরি হাওর ও কইয়ারবন্দ হাওরে এরপূর্বে বাঁধ দেয়া হয়েছিল। কাশীপুর উদগল বিল হাওর উপ প্রকল্পের বর্ধিতাংশে মাত্র একশ হেক্টর জমির ফসলরক্ষায় প্রায় কোটি টাকার প্রকল্প দেয়া হয়েছে।
রবিবার (৫মার্চ) সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলা সদর সংলগ্ন বাহাড়া ইউপির গোবরহরি হাওর, পুটিয়ার হাওর, কইয়ারবন হাওর, শাল্লা ইউপির জোয়ারিয়া, ছাগল নাইয়া, ভাটির হাওর ও খলারবন হাওর। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের বলা হলেও তারা কোনো প্রকল্প দেয়নি এসব হাওরে। ফলে অরক্ষিত থেকে গেলো উপজেলার ছোট ছোট ৭টি হাওরের প্রায় দুই হাজার হেক্টর বোরোজমির ফসল।
গত বছরও (২০২১-২০২২ অর্থ বছরে) ওই হাওরগুলোতে বাঁধ না দেয়ায় নদীরপাড় উপচে কৃষকের ফসল তলিয়ে যায়।
শাল্লা ইউপির ৭নং ওয়ার্ড সদস্য সিরাজ মিয়া বলেন ছাগল নাইয়া হাওর, ভাটির হাওর ও খলারবন হাওরে প্রায় এক হাজার হেক্টর বোরোজমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। গত বছরও বাঁধ না দেয়ায় চব্বিশা, খল্লী গ্রামসহ আশপাশের গ্রামের ফসল রয়েছে। এসব হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ দেয়ার দাবি জানান তিনি।
এবিষয়ে হাওর বাঁচাও আন্দোলন শাল্লা উপজেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তরুণ কান্তি দাস বলেন ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ১৯৭টি পিআইসি গঠন করা হয়েছে। সরকার কৃষকের ফসল নিরাপদে ঘরে তোলার জন্য ৪০কোটি টাকা বরাদ্দও দিয়েছে। হাওরের ফসলরক্ষার জন্য এত বিপুল বরাদ্দ দেয়ার পরও কেনো উপজেলার ছোট ছোট হাওরের দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল অরক্ষিত অবস্থায় রাখা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা প্রি-ওয়ার্কের সময় স্থানীয় কৃষকদের মতামতকে উপেক্ষা করে এসব হাওরগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে। গোবরহরি, পুটিয়া ও কইয়ারবন হাওরে উপজেলার রঘুনাথপুর, কান্দখলা, ঘুঙ্গিয়ারগাঁও, ডুমরা গ্রামের শতশত কৃষকের প্রায় হাজারো হেক্টর বোরোজমির ফসল রয়েছে। গত বছরও ফসলরক্ষা বাঁধ না দেয়ায় এসব হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। কৃষকের সারা বছরের কঠোর পরিশ্রমের একমাত্র ফসল প্রতি বছরই থাকে অরক্ষিত। এসব হাওরগুলোকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের আওতায় আনার দাবি হাওর আন্দেলন সংগঠনের এই নেতার।
ডুমরা গ্রামের কৃষক বাদল চন্দ্র দাশ বলেন ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে গোবরহরি ও কইয়ারবন্দ হাওরে পিআইসি দেওয়া হয়েছিল। এসব হাওরগুলোতে পূর্বেই তো বাঁধ দেওয়া ছিল। তবে এখন বাদ যাবে কেনো ? আর হবিবপুর ইউপির কাশীপুর গ্রামে মাত্র একশ হেক্টর বোরোজমি রক্ষা করতে প্রতি বছরই কোটি টাকার প্রকল্প দেওয়া হয়। অথচ ওই হাওরে আষাঢ় মাসেও পানি উঠে না। এবছর ওই হাওরে আমন ধানও রোপণ করা হয়েছে। কিছু মানুষকে খুশী করার জন্যই প্রতি বছর কোটি টাকার প্রকল্প দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড বলে জানান ওই কৃষক।
এবিষয়ে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও ফোন রিসিভ করেননি উপ সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, কইয়ারবন, পুটিয়া, জোয়ারিয়া, মনুয়া এগুলোতে আগেও আমরা বাঁধ দেই নাই। এখনও দিচ্ছি না। কারণ, প্রত্যেকটা ধান বাঁধ দিয়ে রক্ষা করা যাবে না। কিছুকিছু জায়গা এলাইনমেন্টের বাইরে থাকবে। এসব জায়গায় বাঁধ দিতে গেলে বাঁধের খরচ ও উৎপাদনের দিক চিন্তা করলে সরকারের লস হবে। অন্যান্য বাঁধও হুমকির মুখে পড়বে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জ-২এর নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা বলেন নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি। নতুন হাওরগুলো নিতে হলে স্টাডি করতে হয়, পরিবেশ এই-সেই অনেক ব্যাপার আছে। ছোটছোট হাওরগুলোর ক্ষেত্রে কর্মসূচি, এলজিইডির কাজ দিয়ে করতে পারবে বলে পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন গত বছর যেগুলো দেওয়া হয়েছে, এবছরও সেগুলো দেওয়া হয়েছে। বরং গত বছরের চেয়ে এবছর প্রকল্প বেড়েছে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, উপজেলায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে হাওরে ফসলরক্ষা ডুবন্ত বাঁধের ৮৭ কিঃমিঃ ভাঙা বন্ধধকরন ও মেরামতের জন্য ১৩৮টি পিআইসির বরাদ্দ ছিল ২৪কোটি টাকা। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ১৬০ কিঃমিঃ বাঁধ সংস্কারে ১৯৭টি পিআইসির বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪০কোটি টাকা।