• ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

শাল্লায় হাওররক্ষা বাঁধে অনিয়ম থাকায় ফসল রক্ষায় শঙ্কিত কৃষক

Dainik Shallar Khabor.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৩
শাল্লায় হাওররক্ষা বাঁধে অনিয়ম থাকায় ফসল রক্ষায় শঙ্কিত কৃষক
স্টাফ রিপোর্টার:
সুনামগঞ্জের শাল্লায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধে নানা অনিয়ম দেখা গেছে। কোথাও কাঁদামাটি তুলে মেরামত করা হচ্ছে বাঁধ, আবার কেউ কেউ নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পুরনো বাঁধের গোড়া কেটে তুলছে মাটি। কেউ তো আবার কেটে ফেলছে নদীরপাড়ও। ফলে টেকসই বাঁধের পরিবর্তে আরও দুর্বল করা হচ্ছে হাওরের বাঁধকে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রকল্প দেয়নি পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এরমধ্যে আবার নির্ধারিত সময় ২৮ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে উপজেলার ৬টি হাওরের প্রায় ২৪হাজার হেক্টর বোরোজমির ফসল। এভাবেই বাঁধের কাজে অবহেলা আর নানা অনিয়মের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছে কৃষকের সারা বছরের একমাত্র সঞ্চিত খাদ্য ভাণ্ডার সোনালী ফসল বোরোধান। নানা অনিয়ম ও বাঁধের কাজ সময়মত শেষ না হওয়ায় শঙ্কিত এলাকার কৃষকরা।
২৭ফেব্রুয়ারি (সোমবার) উপজেলার ভেড়াডহর হাওর উপ প্রকল্পের ৮৪ ও ৮৫ নং পিআইসির বাঁধে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এখনও বাঁধে মাটি ফেলার কাজই শেষ হয়নি। তাও কান্দিগাঁও কবরস্থানের ঘা ঘেসে মাত্র এক ফুট উঁচু করে মাটি ফেলা হচ্ছে। তবে কবরস্থানের পূর্ব অংশে কোনো মাটি না ফেলায় হাওর ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানান নূরে মদিনা মাদরাসার সুপার জুনায়েদ আহমেদ। তিনি বলেন কবরস্থানের পূর্বের অংশে মাটি না ফেলায় পানি ঢুকবে হাওরে। ওইসব পিআইসিতে ট্রলি দিয়ে সামান্য মাটি ফেলতে দেখা গেলেও দেখা মেলেনি কোনো পিআইসি কমিটির লোকজনদের। ছায়ার হাওর উপ প্রকল্পের ১৩১ ও ১৩২ নং পিআইসি বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কেটেছে। বাকি আছে তাদের বাঁধে মাটি কাটার কাজও। বাঁধের গোড়া ও দাড়াইন নদীরপাড় কেটে বাঁধ সংস্কার করেছে ভান্ডাবিল হাওর উপ প্রকল্পের ৩৮ নং পিআইসিও। মাটির কাজ এখানো বাকি রয়েছে ছায়ার হাওরের ১৫০, ১৫১ ও ১৫২ নং পিআইসির।
অন্যদিকে ২৬ফেব্রুয়ারি (রোববার) সরেজমিনে দেখা যায় উপজেলার কালিকোটা হাওরের ১১৯, ১১৮, ১১১,১১২,১১৩, ১১৪, ১১৫, ১০৭ ও ১০৮ নং পিআইসির বাঁধে মাটি ভরাটের কাজও এখনও চলমান রয়েছে। এসব পিআইসির কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হতে আরও ১৫দিন সময় লাগবে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। অনেক বাঁধে নিয়ম অনুযায়ী কাজও করা হয়নি। কোথাও প্রোফাইল অনুযায়ী করা হয়নি কাজ। আবার কোথাও করা হয়নি সঠিকভাবে কমপেকশন, বেশিরভাগ বাঁধে ঠিক নেই স্লোভও।
এবিষয়ে শাল্লা উপজেলা কাবিটা স্কীম বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব (এসও) আব্দুল কাইয়ুম মুঠোফোন রিসিভ করেননি। ফোন রিসিভ করেননি সুনামগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুদ্দোহা। তবে এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব মুঠোফোনে বলেন আমি ছুটিতে আছি। আপনি জানেন যে, ক’দিন আগেও পিআইসি কমিটি বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কাটার অপরাধে তাদের আমি জরিমানা করেছি। একজনকে দিয়ে গোড়া ভরাটও করিয়েছি। আমার ড্রামট্রাক ধরা আছে। বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কাটবে কেনো? এখনও যারা নিয়মনীতি উপেক্ষা করে বাঁধের গোড়া থেকে মাটি কাটছে সরেজমিনে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কাজ সম্পন্ন না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন আগামী ৭মার্চ পর্যন্ত সময় বাড়ানো হতে পারে। তবে অফিশিয়ালি এখনও কোনো নির্দেশনা পাইনি। আর কান্দিগাঁও গ্রামের কবরস্থানের পাশের বাঁধের বিষয়ে তিনি আরও বলেন এখানের আর এল কত এসও সাহেবকে আমি জিজ্ঞেস করব। যদি সেখানে আরও মাটির প্রয়োজন হয়, তাহলে সরেজমিনে গিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে হাওরের ১৬০ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারে ১৯৭টি প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। যা গত বছর ৮৭ কিলোমিটার বাঁধ সংস্কারে বরাদ্দ ছিল ২৪কোটি টাকা। প্রকল্প ছিল ১৩৮টি। ২০১৭ সালে হাওরের ফসলহানীর পর থেকে ঠিকাদারি প্রথা বাতিল করে সংশোধিত কাবিটা ২০১৭ নীতিমালা অনুযায়ী গঠন করা হয় ইমপ্লিমেন্টেশন প্রজেক্ট (পিআইসি)। হাওরে জমি আছে এমন স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে ৫ থেকে ৭সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করার নিময় রয়েছে পিআইসিতে।