• ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সুনামগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে গোয়েন্দা পরিচয়ে তল্লাশি, ঢাকায় গ্রেপ্তার

Dainik Shallar Khabor.com
প্রকাশিত ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৩
সুনামগঞ্জে বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িতে গোয়েন্দা পরিচয়ে তল্লাশি, ঢাকায় গ্রেপ্তার

শাল্লার খবর ডেস্ক ::: সুনামগঞ্জ সদরের নারায়নতলা গ্রামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে তল্লাসী, শ্লীলতাহানি, লুটের চেষ্টাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া পরিচয়ে অভিযানের নামে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী আত্মসাতের মূলহোতা আব্দুল কুদ্দুস ওর‌ফে ডলার নাহিদকে রাজধানীর মিরপুর থেকে গ্রেপ্তার করছে র‌্যাব।

র‌্যাব বল‌ছে, দীর্ঘদিন সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির সুবাদে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে পারে আব্দুল কুদ্দুস ওরফে ডলার নাহিদ। তি‌নি বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতেন এবং অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার মাধ্যমে কৌশলে প্রশাসনের সহায়তা নিতেন তি‌নি।

বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর থেকে নাহিদকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব- ৪। ওই সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয়পত্র এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পোষাক পরিহিত ছবি জব্দ করা হয়ে‌ছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২৫ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ সদরের নারায়নতলা গ্রামের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোকসেদ আলীর বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়িতে গোয়েন্দা সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরিচয়ে তল্লাশি, শ্লীলতাহানি, লুটের চেষ্টাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভুয়া পরিচয়ে অভিযানের নামে অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী আত্মসাৎ করেন আব্দুল কুদ্দুস ওরফে ডলার নাহিদ। ওই সময় অভিযানের নামে বেশ কয়েকটি বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং তল্লাসীর নামে বেআইনীভাবে গৃহবধূর শ্লীলতাহানীর ঘটনা ঘটায়।

ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি সুনামগঞ্জ মডেল থানায় পরে সংশ্লিষ্ট থানা আসামিদের গ্রেপ্তারে র‌্যাবের সহায়তা চাইলে র‌্যাব মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি আসামি বিজন রায়কে মিরপুর মডেল থানার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিজনের মাধ্যমে কুদ্দু‌সের বিষ‌য়ে চান‌তে পা‌রে র‌্যাব এবং বিজনের দেয়া তথ্যে কুদ্দুস‌কে গ্রেপ্তার করে।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ডলার নাহিদ বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন গ্রুপে মানুষের কাছে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দিতেন।

তি‌নি প্রাথমিক শিক্ষার গন্ডি পেরিয়েছেন এবং ২০০৯ সালে তার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও নিজেকে ১৯৯৬ সালের এসএসসি ব্যাচ দাবি করে। বিভিন্ন কৌশলে এই ব্যাচের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গ্রুপে যুক্ত হয়ে নিজেকে গোয়েন্দা শাখা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন সময় প্রতারণা করেছেন।

র‌্যাব জানায়, গত চার-পাঁচ মাস আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি গ্রুপের মাধ্যমে ডলার নাহিদের সঙ্গে বিজনের পরিচয় হয়। রাজধানীতে বিজনের সাথে দেখা করার পাশাপাশি বিজনের বাড়ি সুনামগঞ্জে হওয়ায় তি‌নি সুনামগঞ্জ যান।

গ্রেপ্তার বিজন সুনামগঞ্জের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তদের সাথে তার সু-সম্পর্ক ছিল। পরে বিজনের সাথে সুনামগঞ্জে গিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কাছে কৌশলে নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন ডলার নাহিদ।

পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান যে, এখানে তি‌নি মাদকের একটি চালানের বিরুদ্ধে অভিযান করতে এসেছেন এবং অভিযানের জন্য তাদের সহায়তা চান। ওই সময় তি‌নি, বিজন ও অন্যান্য সহযোগীদের নি‌য়ে সুনামগঞ্জ সদরের নারায়নতলা এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে লুটের জন্য পরিকল্পনা করেন। প্রথমত তারা লুটের উদ্দেশ্যে ওই এলাকায় বিত্তশালী কয়েকটি বাড়ি টার্গেট করেন এবং তিন দিন ধরে টার্গেট বাড়ি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে ও বিভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি তারিখ রাতে ঘটনাস্থলে যান। পরে তি‌নি স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয়ের কথা জানিয়ে তাদের ঘটনাস্থলে আসতে বলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযা‌য়ী নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোকসেদ আলী বাড়ীসহ আশেপাশের বাড়িতে তল্লাসী করে এবং বাড়িতে থাকা লোকজনের শ্লীলতাহানী করেন।

এ সময় তারা তল্লাশী কার্যক্রম পরিচালনা করে নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নেন। ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে তারা অভিযান শেষ করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগের চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন তাদের আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সংবাদ দেয়। ওই সময় তি‌নি নিজেকে গোয়েন্দা শাখার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মিথ্যা পরিচয় দিয়ে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।